A sweet love story, একটি মিষ্টি ভালবাসার গল্প
ফুলবাড়িয়া ডি.সি
হাই স্কুল এ আমি
শিক্ষাজীবনের ১১ টি বছর
কাটিয়েছি। এই
স্কুলেই আমি দেখা পাই
আমার সপ্নকন্যার। কিন্তু
স্কুলে থাকা অবস্থায় আমি
তার প্রেমে পড়ি নি। আজকে
আমি আমার সেই সপ্নকন্যার
কথা বলব। কিভাবে
আমরা এক হলাম সেই
গল্প বলব।
ক্লাস
এ বসে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা মারতে ছিলাম।
হঠাত দেখি ক্লাস এ
একটা নতুন মেয়ে ঢুকছে। দেখতে
মোটামোটি কিন্তু চেহারার কোথায়
জানি একটা মায়া মায়া
ভাব আছে। একই
সাথে পাথরের মতো নির্লিপ্ত। আমি
একটু চঞ্চল টাইপের ছেলে
ছিলাম। ক্লাস
এ শয়তানির জন্য অনেক শাস্তি
পাইতাম। তো
নতুন মেয়েটাকে উত্ত্যাক্ত করার চেষ্টায় ছিলাম। এমন
সময় শুনি মেয়েটার নাম
পিয়া। মেয়েটা
নাকি লৌহমানবী টাইপের। বেশি
কিছু করলে বাসায় গিয়ে
মা কে বলে দিবে। এই
ভয়ে উত্ত্যাক্ত করার সাহস পেলাম
না আর। মেয়েদের
সাথে এমনিতে আমি কথা
কম বলতাম। কয়েকজন
ছিল হাতেগনা তাদের সাথেই কথা
বলতাম।
আমার এক সহপাঠীর সাথে
আবার মেয়েদের খুব ভাব ছিল। ওর
কাছ থেকে জানতে পারলাম
মেয়েটার কোন ছেলেফ্রেন্ড নাই। শুনে
আমার কেন জানি ওর
সাথে কথা বলতে ইচ্ছা
হল। কি
কথা বলব টা মনে
মনে অনেকবার প্র্যাকটিস করে নিলাম।
আমাদের টিফিনের সময় ছিল মাত্র
১৫ মিনিট। মনে
মনে নিজেকে বললাম যা
বলবার টিফিনের সময় ই বলব। কারণ
তখন ছেলেদের কেউ ক্লাস এ
থাকে না। কেউ
যদি আমাকে দেখে একটা
মেয়ের সাথে ফ্লারট মারতেসি
তাহলে টিজ খাইতে খাইতে
জীবন শেষ হয়ে যাবে।
সাহস সঞ্চয় করে ওর
নাম ধরে ডাকলাম।
“পিয়া”
“হূম বল।“
“কেমন
আছ?”
“এইত ভাল”
“শুনলাম
তোমার নাকি কোন বেস্টফ্রেন্ড
নাই?”
“কে বলসে? আমার তো
বেস্টফ্রেন্ড আছে।“
“তা সে কি কোন
ভাগ্যবান নাকি ভাগ্যবতী?”
“সে একজন ভাগ্যবতী।“
(লজ্জায় লাল হওয়া শুরু
হইসে)
“আমার
ও না কোন ভাগ্যবতী
নাই।“ (এই
কথাটা আমার প্র্যাকটিসে ছিল
না। কিন্তু
মুখ দিয়ে বের হয়ে
গেসে। নিজেই
লজ্জা পেয়ে গেলাম।
তারপর
উঠে চলে আসলাম।
কিন্তু
আমার এই ফ্লারটিং এর
ঘটনা পুরা ক্লাস জেনে
গেল। আমি
আসলে ওইরকম মাইন্ডে কথাগুলা
বলি নাই। তারপর
আর কি ক্লাস এ
ঢুকলেই শুরু হয়ে যেত
হারামি ফ্রেন্ডগুলার যন্ত্রণা। এই
যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য
মেয়েদের সাথেই কথা বলা
বন্ধ করে দিলাম।
হয়ত দেখা যেত আমি
দাঁড়িয়ে পড়া দিচ্ছি এমন
সময় পিয়া আমার দিকে
তাকাইসে। আর
অম্নি বন্ধুরা শুরু করে দিল।
“দোস্ত
ও তো পটে গেছে। তোর
প্রেমে হাবুদুবু খাচ্ছে।“
আমি পাত্তা না দিতে
চেস্টা করি। ফ্রেন্ডশিপ
ডেতে অনেকগুলা ফ্রেন্ডশিপ বেল্ট মারছিলাম আরচিস
থেকে।(আমি
ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বেশিরভাগ দোকান থেকে মেরেই
ফ্রেন্ড দের দিছি)
শুধু একটা বেল্ট নিজের
টাকা দিয়ে কিনছিলাম।
পিয়া কে দিব বলে। কেন
যেন আমার মন ওকে
চুরি কয়রা বেল্ট দিতে
সায় দিল না।
পরের দিন ক্লাস এ
গিয়ে ওর অপেক্ষায় বসে
ছিলাম। ও
আসল কিন্তু উইশ করব
কিভাবে বুঝতে পারছিলাম না। হারামি
বন্ধুগুলা শকুনের চোখে তাকিয়ে
ছিল। উপায়
না দেখে অপেক্ষা করতে
থাকলাম কখন সুযোগ আসে। কিন্তু
যখনই সুযোগ আসে তখন
হাত পা কাঁপতে থাকে। হৃৎপিণ্ডের
স্পন্ধন থেমে যায়।
মুখে যেন কেউ সেলাই
করে দিয়েছে। এভাবে
করতে করতে স্কুল ছুটি
হয়ে গেল। উপায়
না দেখে আমি সিদ্ধান্ত
নিলাম ও যখন সিঁড়ি
দিয়ে নামবে তখন দিয়ে
দিব। যেই
ভাবা সেই কাজ।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
ওকে উইশ করলাম।
ওর উত্তর ছিলঃ
“এতক্ষণ
পরে!!!”
এর উত্তরে কি বলব
জানা ছিল না।
ও চলে গেল।
এরপর থেকে ক্লাস এ
প্রায় ই ও আমার
দিকে তাকিয়ে থাকত।
আমি আড় চোখে দেখতাম। কিন্তু
কথা বলার সুযোগ পেতাম
না। যাও
বা সুযোগ পেতাম তা
২ ১ কথার মধ্যে
সিমাবদ্ধ থাকত। আমার
অন্য ফ্রেন্ডরা যখন ওর সাথে
কথা বলত তখন হিংসা
হত। কেন
হত তাও জানতাম না। আসলে
বয়স কম ছিল তো
ভালবাসার মানেটাই বুঝতাম না।
এভাবেই কেটে গেল ১
বছর।
ক্লাস
৯ এ আমি অনেক
খারাপ অভ্যাস আয়ত্ত করেছিলাম। স্যারের
কাছে পড়ার কথা বলে
টাকা নেওয়া, সিগারেট খাওয়া,
এরকম কাজ করে পড়ালেখা
মাথায় তুলেছিলাম। ফলাফল
ও খুব খারাপ হল। বার্ষিক
পরীক্ষায় অনেক কম নাম্বার
পেলাম সব বিষয়ে।
তবে সবথেকে বড় শক
হয়েছে তখন যখন আব্বু
রেজাল্ট আনতে গিয়ে জানতে
পারল আমি এতদিন যে
স্যারের কাছে পড়ার কথা
বলে টাকা মারতাম সেই
স্যারের কাছে পরি না। এই
ঘটনার পর বাসায় বেশ
উত্তম মধ্যম খেলাম।
আব্বুর কাছে প্রমিস করলাম
আর খারাপ কাজ করব
না। এরপরের
ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে
যেতে লাগল। আমি
পড়ায় মন বসালাম।
ভাল ছেলের ভুমিকায় অবতীর্ণ
হলাম।
এর মধ্যে পিয়া অনেকদিন
চেষ্টা করেছিল আমার সাথে
কথা বলতে। আমি
না শুনার ভান করতাম। জানি
এটা নিষ্ঠুরের মতো হয়ে যাচ্ছিল
কিন্ত আমি নিরুপায়।
তাছাড়া আমি তখন জানিনা
আমি ওকে ভালবাসি কিনা। শুধু
জানি ওর সাথে কথা
বলতে গেলেই আমার কেন
জানি বুক কাঁপত।
এভাবে
ওকে ইগনর করার পর
ও পরে আর আমার
সাথে কথা বলতে আসত
না। আমার
খুব খারাপ লাগত তখন। আমি
বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতাম ওর
দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কিন্তু
পারতাম না। এর
মধ্যেই আমাদের ১ম সাময়িক
পরীক্ষা শেষ হল।
রেজাল্ট ক্লাস ৯ এর
তুলনায় হাজার গুন ভাল
করেছিলাম। অল্পের
জন্য এ+ পাই নাই। রেজাল্টের
খুশিতে আমি আবার ছন্নছাড়া
হয়ে গেলাম। আবার
বাঁদরামি শুরু করলাম।
আর বাঁদরামির ফল পেলাম হাতেনাতে। প্রি
টেস্ট এ আবার খারাপ
করলাম।
এবার চোখ কান বন্ধ
করে পরতে লাগলাম।
পিয়ার দিকে ফিরেও তাকাতাম
না। ভাব
নিয়ে চলতাম। কিন্ত
একটা জিনিস আমাকে সবসময়
কষ্ট দিত। ও
যখন আমার সামনে আমাকে
দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য কারও
সাথে কথা বলত।
হাঁসি ঠাট্টা করত।
আমার মন ওকে চাইত
কিন্তু মস্তিস্ক আমাকে বাধা দিত। মনের
থেকে আমি মস্তিস্ক কে
বেশি পাত্তা দিয়েছিলাম।
আমার কেন জানি মনে
হত ও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু
ভরসা পাই নাই।
তাই ব্যাপারটা কারও সাথে আলাপ
করি নাই। একদিন
আমার এক ফ্রেন্ড এসে
বলল,
“একজন
জানতে চাইছে তুই কাউকে
লাইক করিস কিনা?”
আমি বললাম , “না তো।
কিন্তু কে জানতে চাইছে?”
“পিয়া”
আমি একটু ধাক্কা মতন
খেলাম। পিয়া
কেন জানতে চাইবে? তবে
কি ও আমার প্রতি
দুর্বল? নাহ তা কি
করে হয়! ও তো
আমার দিকে এখন ফিরেও
তাকায় না। হয়ত
আমার বন্ধুটাই আমাকে বোকা বানাতে
চাইছে। আমি
চুপচাপ ক্লাস এ ঢুকে
গেলাম। আমি
আসলে তখন নিজেকে নিয়েই
ব্যস্ত ছিলাম। নাহলে
নিজের মন কি বলতে
চাচ্ছে তা বুঝতে পারতাম। পিয়া
কি চাচ্ছে তাও বুঝতে
পারতাম। কিন্তু
২ জনের কেউই একজন
আরেক জনকে বুঝতে পারলাম
না। ফলাফল
হল ২ জনের মধ্যে
কথা প্রায় হয়ই না। আমার
তখন মোবাইল ছিল না। টেস্ট
পরীক্ষার আগে আম্মুর মোবাইল
তা ব্যবহারের জন্য চেয়ে নিলাম। পরীক্ষার
সময় রাত জেগে পড়তাম। কিছু
পারতাম না। সব
নতুন নতুন লাগছিল।
পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে
গেলে ফ্রেন্ড দের সাথে কথা
বলে রিলাক্স হতাম। এ
কয়দিনে আমি পিয়ার কথা
প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
টেস্ট পরীক্ষা শেষের পর প্র্যাক্টিক্যাল
পরীক্ষা শুরু হল।
কিন্ত পরীক্ষার হলে ঢুকে আমার
কেন জানি সব খালি
খালি মনে হল।
হটাত করে আবিষ্কার করলাম
আজকে পিয়া আসেনি পরিক্ষা
দিতে। ওর
বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করলাম। ওদের
কাছ থেকে জানতে পারলাম
যে ও অসুস্থ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেদিন
মন খারাপই হয়ে রইল।
নিজের
অজান্তেই ও আমার মনে
জায়গা করে নিয়েছে।
আমি তা কখনই বুঝিনি। কিন্তু
এস এস সি পরীক্ষার
সময় এই অনুভুতি টা
প্রবল হয়ে উঠল।
সাব্জেক্টিভ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর
আমি ওর আম্মুর মোবাইল
নাম্বার যোগাড় করি।
কারণ জানতে পেরেছিলাম যে
ওর আম্মুর মোবাইল দিয়ে
ও ফ্রেন্ডদের সাথে এসএমএস এ
যোগাযোগ করে। সাহস
করে একদিন মেসেজ পাঠিয়ে
দিলাম। কিছুক্ষন
পর ওর রিপ্লাই পেলাম। এভাবেই
শুরু হয়ে গেল চ্যাট
করা। প্রায়
দেড় মাস ওর সাথে
চ্যাট করলাম। ততদিনে
আমরা খুব ভাল বন্ধু
হয়ে গেছি। আমি
মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কৌশলে
ওর কাছ থেকে জানতে
চাইতাম ওর কোন পছন্দের
মানুষ আছে কিনা।
ও বারবার না বলত। মাঝে
মাঝে ওকে বুঝাতে চাইতাম
আমি ওকে কতটা ফিল
করি। কিন্তু
ও এসব জোক মনে
করত। ১৪
এপ্রিল। পহেলা
বৈশাখ। ওকে
উইশ করলাম। কিছুক্ষণ
চ্যাট করার পর ও
বলল,
“গত বছর আমি আল্লাহর
কাছে একটা জিনিস খুব
করে চেয়েছিলাম। কিন্তু
পাই নাই। মনে
হয় এবছরও পাব না”
“কি চেয়েছিলে”
“বলা যাবে না”
“আমাকে
বল। আমি
তোমার ভাল বন্ধু”
“আরে তোমাকেই তো বলা যাবে
না”
এই কথাটা শুনে আমি
বুকে কিছু কিছু অনুভব
করলাম। ওইদিন
আর কথা বেশি বাড়ে
নাই। পরেরদিন
কথায় কথায় ও বলল
ওর নাকি একজনকে পছন্দ
কিন্তু বলতে পারে নাই। আমার
কেন জানি মনে হল
অই একজন আমিই।
আমিও বললাম আমারও একজনকে
খুব পছন্দ কিন্তু বলতে
পারি না ভয়ে।
যদি ফিরিয়ে দেয়……… আমি
খুব জর করলাম ও
কাকে পছন্দ করে জানার
জন্য। ও
নিজেও আমাকে জর করল
আমারটা বলার জন্য।
শেষে কেউই বললাম না।
তারপর
এল সেই দিন।
২৮ এপ্রিল। আমি
সকালে কম্পিউটার ক্লাস এ গেলাম। স্যার
লেকচার দিচ্ছিল আর আমি পিয়ার
সাথে চ্যাট। ওইদিন
আমরা দুইজন ই খুব
চাপাচাপি করছি নিজেদের পছন্দের
মানুষের নাম এক্সচেঞ্জ করার
জন্য। শেষমেশ
আমিই আগে বললাম।
“আমার
ভালবাসার মানুষটির নাম পিয়া”
তারপর
আর ওর কোন রিপ্লাই
নাই। আমি
তো ভয়ে অস্থির হয়ে
গেলাম। বলা
উচিত হল কিনা টা
ভাবতে লাগলাম। অনেকক্ষণ
পর আমি নিজেই মেসেজ
পাঠালাম। ওকে
বললাম ওর পছন্দের মানুষের
নাম বলতে। ওর
রিপ্লাই পেয়ে আমি কিছুক্ষণ
স্তব্ধ হয়ে ছিলাম।
মোবাইলের স্ক্রিনের লেখাগুলো থেকে চোখ সরাতে
পারছিলাম না। ওর
পছন্দের মানুষটি আর কেউ নয়
আমিই। আমি
খুশিতে কি করব বুঝতে
পারছিলাম না। জীবন
টা সার্থক মনে হল। কনফার্ম
হওয়ার জন্য ওকে আবার
জিজ্ঞেস করলাম। ও
বলল ওর পছন্দের মানুষটি
আসলেই আমি। ও
জোক করছে না।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম
ও আমাকে আগের মতই
চায় কিনা। ও
বলল এই কথার উত্তর
একটু ভেবে বল্বে।(আসলে পার্ট নিতেছিল। যখন
আস্ক করছি তখনী ও
রাজি ছিল। খামকা
টেনশন খাওয়াইছে। ) পরে
বিকালের দিকে ও মেসেজ
দিয়ে জানাল ও রাজি
আমার সপ্নকন্যা হতে, আমার ভাজ্ঞবতিহীন
জীবনে ভাগ্যবতী হতে।
No comments